স্বদেশ ডেস্ক: কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা নানান অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন সংগঠনের সাংগঠনিক নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন। সে সময় ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিরক্তিও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই সভায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কথা বলেছেন। এমন কথা বাস্তবে প্রতিফলিত না-ও হতে পারে। তবে এটি স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী তাদের কর্মকাণ্ডে বেশ ক্ষুব্ধ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রংপুর-৩ এর উপনির্বাচন এবং কয়েকটি উপজেলার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে আয়োজিত এ বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ উঠে আসে। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে তাদের সময়নিষ্ঠা ও বেশ কিছু ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে ব্যর্থতা ও অনিয়মের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তখন বেশ কয়েকজন নেতাও বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সময়মতো বিভিন্ন কর্মসূচি উপস্থিত না থাকা, মধুর ক্যান্টিনে অনিয়মিত থাকা, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়া, ত্যাগীদের মূল্যায়ণ না করার মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সকাল ১১টা থেকে উপস্থিত থাকলেও কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী দুপুরে সেখানে পৌঁছান। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির অনুষ্ঠানেও তারা মন্ত্রীর পরে অনুষ্ঠানে গেছেন এমন অভিযোগ আছে।
তবে সভা চলাকালে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার পরামর্শে তারা সেখান থেকে চলে যান।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘শুনেছি ছাত্রলীগের কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কমিটি ভাঙার মতো কিছু বলেননি। অনেকেই এই কমিটিকে নিয়ে বিতর্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারাই এসব ছড়িয়ে থাকতে পারে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ ও ১৩ মে সম্মেলন করেও কমিটি করতে ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগ। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে দিক-নির্দেশনা দেন। সে বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ১৩ মে সম্মেলনের এক বছরের মাথায় ৩০১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে সংগঠনটিতে অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে।